বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বাকিতে ব্যবসা : তিন দশকে প্রিমিয়াম খেলাপির পরিমান হতে পারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা

  |   বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   59 বার পঠিত

নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বাকিতে ব্যবসা : তিন দশকে প্রিমিয়াম খেলাপির পরিমান  হতে পারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা

অহিদুজ্জামান মিঞা :
আশির দশকে বেসরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে এ পযর্ন্ত প্রায় সাড়ে তিন দশকে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে খোলাপি প্রিমিয়ামের পরিমান হতে পারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। সকল নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বিপুল পরিমান প্রিমিয়াম বকেয়া রয়েছে। কোম্পানিগুলো বাকিতে ব্যবসা করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলো এবং বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে খেলাপি প্রিমিয়ামের সঠিক কোন তথ্য নেই। দাবী খাত সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভযোগ্য সূত্রের।
জানা গেছে, নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় অবৈধ বাকিতে ব্যবসা এবং অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে ব্যবসা করার বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছে না। নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে ব্যবসা করা এবং বাকিতে পলিসি বিক্রয় করা। এ’দুটি সমস্যার সমাধান করা গেলে সাধারণ বীমা কোম্পানীগুলো আর্থিক দিক দিয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে দাবি এই সূত্রের। পাশাপাশি সরকার বেশি রাজস্ব আয় পাবে। নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরাও এর সুফল পাবে। বীমা কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বেতন ভাতা নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ চলে আসছে। কোম্পানীর শীর্ষ পর্যায়ের কিছু সংখ্যক নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়া বাকি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা সময়োপযোগি নয়। তারা প্রতিনিয়ত অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করে থাকেন। চাকরি শেষে পাওনাদি পেতে হতে হয় গলদঘর্ম। পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা হয়। বিকল্প কোন ব্যবস্থা করতে না পারায় ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাদের অনেককেই এ ভাবেই চাকরি করতে হচ্ছে। দাবি এ সূত্রের।
সূত্রটি দাবী করেছে, ব্যাংক খেলাপি লোনের চেয়ে অনেক বেশি হবে সাধারন বীমার প্রিমিয়াম খেলাপি। ব্যাংকের খেলাপি লোনের তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে থাকে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকেও থাকছে। অথচ বীমা প্রিমিয়াম খেলাপির কোন তথ্য বীমা কোম্পানি ও বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কারো কাছে নেই। বীমা কোম্পানিগুলো ইচ্ছা করেই এই তথ্য সংরক্ষন করে না। কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইড্রায়ও এর কোন তথ্য পাঠায় না। আশির দশকে বীমা সেক্টর বিরাষ্ট্রীয় করণের পর থেকেই বলা চলে এই সমস্যা চলে আসছে। বহুবার এই সংকট দূর করার উদ্যোগ নিলেও ব্যক্তি স্বার্থের কারণে কিছু দিনের মধ্যে সব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সূত্রটি বলেছে, এখন প্রশ্ন হতে পারে জেনে শুনে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো কেন বাকিতে ব্যবসা করছে এবং অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে ব্যবসা করছে। এর জবাব খুজঁতে যেয়ে জানা গেছে, এমডি নিজের চাকরি বাচাঁতে যেয়ে এই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। একজন এমডিকে নিয়োগ দেয়ার সময়ে ব্যবসায়িক টার্গেট বেধে দেয়া হয়। এই টার্গেট পূরনে ব্যর্থ হলে এমডির চাকরি নড়বড়ে হয়ে যায়। কোন ভাবে চুক্তির মেয়াদ পূরন করতে পারলেও নবায়নের আর সুযোগ সৃষ্টি হয় না। এমনকি কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতাসহ যাবতীয় খচর ব্যবসা করেই মেটাতে হয়। কোন বীমা কোম্পানির মালিক তার অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা এনে বীমা কোম্পানির খরচ মেটাবে না। এরপর ব্যবসায়িক লাভের বিষয়টিতো রয়েছেই। এমডি তার চাকরি রক্ষা করতে নিয়ম না অনিয়ম বিবেচনা না করে ব্যবসা ধরার জন্য সকল প্রকার কলা কৌশল অবলম্বন করেন। নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসায়ে অত্যন্ত প্রতিযোগিতা চলে। এজন্টের মাধ্যমে ব্যবসা আসে। এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশ হলেও এই হারে ব্যবসা পাওয়া খুব কঠিন। অথচ ক্ষেত্র বিশেষে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমিশন দিয়েও ব্যবসা আনতে হয়। অতিরিক্ত কমিশন না দিলে ব্যবসা অন্য কোম্পানিতে চলে যায়। একই ভাবে আবার বাকিতে ব্যবসা না করলে ক্লায়েন্ট অন্য কোম্পানিতে চলে যায়। ব্যবসা ধরে রাখতে বাকিতে ব্যবসা করতে বাধ্য হয় কোম্পানি। এতে বীমা কোম্পানির কিছুটা লাভও আছে। সেটি হচ্ছে, ক্লায়েন্টের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী একটি বা দুটি প্রিমিয়াম পাওয়া যায়। ক্লায়েন্ট বীমা পত্রটি নিয়ে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের পর আর যোগাযোগ করেন না। যতোই অনুরোধ করা হোক না কেন তিনি বাকি প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেন না। কোম্পানিও ক্লায়েন্টকে ধরে রাখতে প্রিমিয়াম পরিশোধে চাপ সৃষ্টি করেন না। কোম্পানি তখন কাভার নোটটি নষ্ট করে ফেলেন। ক্লাইন্টের সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। একটি বা দুটি প্রিমিয়ামের যে টাকাটা পান সেটিই লাভ। এই বাকি ব্যবসার কোন হিসাব দেখানো হয় না। বার্ষিক প্রতিবেদনে এর কোন তথ্য আসে না। ফলে সরকারও এ ক্ষেত্রে রাজস্ব পায় না। এভাবে কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

Arthobiz |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক : অহিদুজ্জামান মিঞা
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: খান ম্যানশন, ৮-ই, ২৮/এ-৫, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।
ইমেইল: arthobiz61@gmail.com
যোগাযোগ: 01670045191